পাবলিকেশন সমাচার

উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য পাবলিকেশন একটা পজিটিফ ফ্যাক্টর বটে। ভর্তিচ্ছু ছাত্রের যদি রিসার্চ পেপার peer-reviewed journal এ প্রকাশিত হয়, তবে তার রিসার্চে সফল হবার সম্ভাবনা আছে ধরে নিয়ে ভর্তি কমিটির তালিকায় ভালো অবস্থাতেই সে থাকবে। তাই পাবলিকেশন করা নিয়ে অনেকেই বেশ আগ্রহী। কিন্তু এই পাবলিকেশন কোথায় করবেন, কোন জার্নাল আসল আর কোনটা নকল, এইগুলা নিয়ে অনেকেই বেশ বিভ্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। তাই আজকের এই লেখায় মূলত এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলতে চাই। # পাবলিকেশন থাকা বাধ্যতামূলক না # আন্ডারগ্রাডে থাকা কেউ পেপার পাবলিশ করবে, এটা আসলে বাধ্যতামূলক না। তাই খুব উচ্চমার্গীয় ইউনিভার্সিটি ছাড়া আর কেউ এই ব্যাপারটা বাধ্যতামূলক ধরতে যাবে না। তাই পাবলিকেশন থাকা না থাকা নিয়ে খুব বেশি টেনশনের দরকার নাই। থাকলে ভালো, না থাকলে ব্যাপার না।
# “পাবলিকেশন” কাহাকে বলে? #
পাবলিকেশন বলতে এখানে ধরতে হবে peer reviewer conference, workshop, বা journal এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র, যার লেখক তালিকায় ছাত্রটি আছে। ম্যাগাজিনে লেখা – গুরুত্বপূর্ণ না। ইউনিভার্সিটির পত্রিকায় ছাপা কিছু, কাজে আসবেনা।
# সংখ্যা বনাম মান #
পাবলিকেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, quantity না, quality গুরুত্বপূর্ণ। মানে অখ্যাত জায়গায় ১০টা পাবলিকেশন থাকার বদলে ভালো জায়গায় ১টা পেপার থাকাই দরকার।
# কনফারেন্স? ওয়ার্কশপ? #
অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে জানি না, তবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কনফারেন্সের পেপারের গুরুত্ব ওয়ার্কশপের পেপারের চাইতে বেশি। জার্নাল নিয়ে অন্যান্য সাবজেক্টে অনেক বেশি গুরুত্ব ধরা হয়, কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতটা না।
# আসল বনাম নকল #
বাজারে অজস্র জার্নাল আছে। গাদায় গাদায় পেপার তারা ছাপে। পেপার পাঠালে ছাপবার আগে অনেকে ফী নেয়। কিন্তু এর মধ্যে অনেকগুলাই নকল একাডেমিক জার্নাল, মানে একাডেমিয়াতে এগুলার গুরুত্ব বলে কিছুই নাই। জার্নালের মান বোঝার জন্য একটা মেট্রিক হলো ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর, যা আসলে কোনো জার্নালের পেপার অন্যত্র কতবার সাইট করা হয়েছে, তার একটা পরিমাপ। ১ এর বেশি হলে ভালো, যত বেশি তত ভালো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ২ নম্বরী জার্নালেরা ভুয়া ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর প্রচার করে বেড়ায়। আসল নকল বুঝবেন কী করে? খেয়াল করে দেখুন, কোনো জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধগুলার লেখক কারা। যদি দেখেন প্রায় সবাইই আপনার মতো ছাত্র, কিংবা ভারতের, আফ্রিকার, এশিয়ার অখ্যাত সব জায়গার শিক্ষার্থী/টিচার, তাহলে ধরে নিতে পারেন ঐটা ২নম্বরী জার্নাল। শুনতে খারাপ শোনালেও বলতে চাই, আন্ডারগ্রাড লেভেলে জার্নালে প্রকাশিত হবার মতো কাজ কমই হয়, কাজেই আপনার আন্ডারগ্রাডের থিসিস থেকে জার্নাল পেপার দেয়ামাত্র এক্সেপ্ট হয়ে গেলে সেই জার্নালটাই ফালতু, তার সরাসরি প্রমাণ পেয়ে যাবেন। ভর্তিচ্ছু অনেক ছাত্রের সিভি দেখেছি, অজস্র পেপার যার অধিকাংশই International Journal of অমুক তমুকে ছাপা। এইগুলা যে ভুয়া জার্নাল, সেটা কিন্তু একাডেমিয়ার লোকজন জানে। কাজে যদি কেউ ভাবে যে, সিভিতে এসব দিয়ে ভর্তি কমিটিকে বোকা বানানো যাবে, তাহলে বলতে হবে বোকার স্বর্গে বাস করছে সে। এসব ভুয়া জার্নাল দিয়ে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিতে প্রমোশন বাগানো যেতে পারে, কিন্তু বিদেশের ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে এগুলা কাজে আসবেনা। তার উপরে প্রকাশনার জন্য ফি নেয় এমন জায়গায় পয়সা দিয়ে ছাপানো পেপার তো আরো worthless, আপনার পয়সাটা যাবে, কিন্তু বিনিময়ে পাবেন অর্থহীন গালভরা একটা “পাবলিকেশন”। কনফারেন্সের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। অজস্র ভুয়া কনফারেন্স আছে, যেখানে কিছু একটা পাঠালেই এক্সেপ্ট করে। MIT এর কয়েকজন ছাত্র একবার automated paper generator দিয়ে ভুয়া একটা পেপার বানিয়ে এরকম একটা জায়গায় পাঠিয়েছিলো, দিব্যি এক্সেপ্ট করেছে সেই ফ্রড কনফারেন্স। এরকম জায়গায় পেপার পাঠিয়ে নিজের সিভিকে কলঙ্কিত না করাই ভালো। তাহলে ভালো জার্নাল, কনফারেন্স চিনবেন কীভাবে? আগেই বললাম, কারা ওসব জায়গায় পেপার পাবলিশ করে সেটা দেখে নিন। কনফারেন্সের ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম কমিটিতে কারা আছে দেখে নিন। আপনার সাবজেক্টের নানা গুরুত্বপুর্ণ সংস্থার জার্নাল বা কনফারেন্সেই কেবল পেপার দিন – যেমন কম্পিউটার সাইন্সের ক্ষেত্রে IEEE, ACM, USENIX ইত্যাদি। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর দেখে নিন scopus বা অন্যান্য খ্যাতনামা জায়গা থেকে। শর্টকাট খুঁজবেন না। কাজ হবেনা, গ্যারান্টিড। (ও হ্যাঁ, অনেককেই দেখেছি Lambert Publications থেকে বই বের হয়েছে বলে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নাম কামান, সিভিতে দেন। এইটা আরেকটা ২ নম্বর কোম্পানি, যার কাজ হলো বিনা বাক্যব্যয়ে যে কারো থিসিসকে অন-ডিমান্ড বই আকারে রাখা, যেটার কথা আসলে সবাই জানে। কাজেই এরকম “বই” এর অথর হিসাবে নাম কেনার চেষ্টাও করবেন না, ভর্তি কমিটির লোকজন এতো বোকা না, তারা মোটামুটি সব ঘাটের জলের খবরই রাখে। গুগল সার্চ করে কোনো কিছু স্ক্যাম কিনা, তা সহজেই দেখে নিতে পারেন)। (সময়াভাবে অমুক জার্নাল বা তমুক কনফারেন্সটা কেমন, এরকম প্রশ্নের জবাব দিতে পারছিনা বলে দুঃখিত।)
Written By: Ragib Hasan
  Assistant Professor at University of Alabama at Birmingham

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *