গবেষণা নিয়ে আগের লেখায় লিখেছিলাম, গবেষণা কীভাবে শুরু করতে হবে(http://on.fb.me/1cqTjyc)। এই ব্যাপারে অনেকের অভিযোগ – গবেষণা করতে গেলে অনেক রিসোর্স লাগে, সেটা দেশে বসে পাওয়াটা কঠিন। এই ব্যাপারটা নিয়েই আজকে কিছু লিখছি।
পড়ো পড়ো পড়ো – এইটা আগেই বলেছিলাম, নতুন কিছু করতে হলে জানতে হবে (নৈলে নতুন করে জুতা আবিষ্কারে পণ্ডশ্রম হতে পারে)। তাই রিসার্চ পেপার জোগাড় করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুগল স্কলারে সার্চ দিলে রিসার্চ পেপারের কপি পিডিএফ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অনেক সরকারী ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে অনেক রিসার্চ পাবলিকেশনের সাবস্ক্রিপশন আছে ও সেখান থেকে ডাউনলোড করে নেয়া চলে (বুয়েটে আছে জানি, অন্যত্রও থাকার কথা)। আর কিছু না পেলেও অনলাইনে নানা রিসার্চ সংক্রান্ত গ্রুপে অনুরোধ করে প্রবাসী কারো মাধ্যমে পেতে পারেন। আর শেষ চেষ্টা? রিসার্চ পেপারে লেখকের ইমেইল দেয়া থাকে, সেখান থেকে তাকেই ইমেইল করে কপি চাইতে পারেন। অধিকাংশ লেখকই চাইলেই কপি পাঠান।
কম্পুমিস্তিরি হিসাবে আমার জ্ঞানের সীমা যন্ত্রগণক টাইপের বিষয় পর্যন্তই, তবে ইদানিং অধিকাংশ বিষয়ে কম্পিউটেশনাল অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। আপনি যদি সেরকম কোনো বিষয়ে কাজ করেন, তাহলে মোটামুটি মানের কম্পিউটার যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই কাজ চলবে। দরকার হলে কয়েকটি কম্পিউটার এক করে ক্লাস্টার বানিয়ে কাজ করা চলে। তবে আরো ভালো হলো নানা কোম্পানির ফ্রি কম্পিউটার টাইম এর সুযোগ নেয়া। যেমন, এমাজনের ক্লাউডে ছাত্রদের জন্য প্রতি মাসে ফ্রি ১০০ ডলার ইউজ করার ব্যবস্থা আছে। (তবে সমস্যা একটাই, ক্রেডিট কার্ড নম্বর দেয়া লাগে, তবে বাংলাদেশে অনেকে এই নম্বর ব্যবহারের সুযোগ দিতে পারে, খোঁজ নিন)। এটা বেশ ভালো একটা সুযোগ (এবং মাসে ১০০ ডলারের ক্লাউড টাইম খরচ করা রীতিমত জটিল কাজ)।
রিসার্চের গোড়ার কথাটা তো বলেই ফেললাম, ইন্টারেস্টিং বিষয় পাওয়াটা হলো আরো জটিল কাজ। দুনিয়ায় অনেক কিছুই আছে, সেটার মধ্যে কোনটাতে আপনার আগ্রহ আছে এবং অন্যদেরও আগ্রহ থাকবে, সেটা বের করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সাজেশন যেটা দিতে চাই তা হলো, মোবাইল ডিভাইস নিয়ে কাজ করেন। আপনি যে বিষয়েই পড়াশোনা করেন না কেনো, মোবাইল ডিভাইসের সাথে তার একটা যোগসূত্র বেরুবেই। স্মার্টফোন আজকাল বাংলাদেশে এতো সস্তা যে, প্রায় অনেকেরই নাগালের মধ্যে। আর স্মার্টফোনের সেন্সর বা লোকেশন ক্যাপাবিলিটি ব্যবহার করে ইন্টারেস্টিং সব কাজ করা সম্ভব। যেমন, স্মার্টফোন ভিত্তিক ট্রাফিক জ্যাম প্রেডিক্টর, কিংবা স্মার্টফোনভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা, অথবা স্মার্টফোন ব্যবহার করে আপনার টপিক রিলেটেড কিছু। এতে করে সুবিধাটা হলো, আপনার কাছে রিসোর্স সহজেই পাবেন, আর বাংলাদেশে প্রাকটিকাল ফিল্ডে কাজে লাগে এমন কিছু একটা বের হবে (এধরণের কাজে বিদেশী ফান্ডিংও অনেক)।
সব শেষে ফান্ডিং নিয়ে ছোট্ট একটা কথা বলি। রিসার্চ এর ফান্ড দেশে বসেই কিন্তু পেতে পারেন। দুনিয়ার নানা সংস্থা/কোম্পানি ফান্ড নিয়ে বসে আছে। ইন্টারেস্টিং প্রজেক্টে সহজেই পেতে পারেন। গুগলের রাইজ ছাড়াও ফ্যাকাল্টি এওয়ার্ড, সাইন্স ফেয়ার আছে, অন্য অনেক সংস্থার এরকম গ্রান্ট আছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, একটু সময় দিলেই সেটা পাবেন। আপনার রিসার্চ আইডিয়াটাকে ভালো করে প্রেজেন্ট করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। আমার একটা নোটের লিংক দেই, সেখানে এই বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন। (http://on.fb.me/1brS4La)
সব নবীন গবেষকদের সাফল্য কামনা করছি।
[রাগিব হাসান ২০১৪-০২-১৯]
Written By: Ragib Hasan
Assistant Professor at University of Alabama at Birmingham