গবেষণা বা রিসার্চ কীভাবে করবেন?

 তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায়ই ইমেইল পাই, তারা রিসার্চ বা গবেষণা করতে আগ্রহী, কিন্তু বুঝতে পারছেনা কীভাবে শুরু করবে। তাদের এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টাতেই এই লেখা। রিসার্চ বা গবেষণা মানে কী? কোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ও তার মূল্যায়ণের ভিত্তিতে একটা নতুন কোনো সিদ্ধান্তে পৌছানো কিংবা কোনো কিছুর কার্যকারিতা বের করাটাই কিন্তু রিসার্চের মধ্যে পড়ে। সেটা যেকোনো বিষয়ের উপরেই হতে হবে। আদর্শ রিসার্চ অনেকটা এরকম – প্রথমে কোনো বিষয়ে একটা তত্ত্ব বা হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে হবে। তার পর সেটা যাচাই করার জন্য একটা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, এবং সেই পরীক্ষার সব তথ্য সংগ্রহ করে তা দিয়ে সেই তত্ত্বটি সঠিক কিনা তা নির্ধারণ করা। এবং সবশেষে সেই তত্ত্বকে গ্রহন বা বর্জন করা। থিওরিটা নাহয় বোঝা গেলো, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে রিসার্চ করবেন কীভাবে? রিসার্চের ক্ষেত্রে প্রথম কথা শেষ কথা হলো, পড়ো পড়ো পড়ো!! কোনো কিছু সম্পর্কে রিসার্চের শুরুটা করতে হবে সেই বিষয়ে পড়াশোনা করে। গুগল স্কলারে সেই বিষয় সম্পর্কে সার্চ করলে ঐ বিষয়ের উপরে সব গবেষণা নিবন্ধের তালিকা অনায়াসে পাওয়া যায়। অনেক জার্নালে সাবস্ক্রিপশন চাইলেও বাংলাদেশের অনেক ইউনিভার্সিটিতে সেটার ব্যবস্থা আছে। নইলে নানা ফেইসবুক গ্রুপে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে যেকোনো পেপারের কপি পাওয়া সম্ভব। এইভাবে যেকোনো বিষয়ের উপরে অন্য সবার কী কী কাজ হয়েছে তা জেনে নিতে হবে। প্রতিটি পেপার পড়ার সময়ে ঐ পেপারের উপরে ১ পাতার রিপোর্ট রাখতে হবে লিখে। তাতে থাকবে (পেপারের সারাংশ, ভালো দিক, দুর্বল দিক, এবং মন্তব্য)। আরো ভালো হয় সব পেপার পড়া হয়ে গেলে সেগুলার ভিত্তিতে একটা সার্ভে লিখে ফেলা নিজেই। এই সার্ভে যেমন প্রকাশ করা সম্ভব, তেমনি নিজের রিসার্চের পরের অংশেও সেটা লাগবে কাজে অনেক। পরের ধাপে আসবে এই রিসার্চ সার্ভের ভিত্তিতে দেখা যে, কোন বিষয়ে এখনো কাজের সুযোগ আছে, মানে কেউ কাজ করেনি। সেটা বের করতে পারলে সেই বিষয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে। তবে চোখ কান বন্ধ করে কাজে ঝাঁপিয়ে না পড়ে শুরুতেই ভেবে নিতে হবে কয়েকটা দিক। রিসার্চের প্রশ্নটা কী, কোন বিষয়ের উপরে কাজ করছেন, সেটাকে ৩/৪ বাক্যে প্রকাশ যদি করতে না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে রিসার্চের মূল গন্তব্য সম্পর্কে আপনার ধারণাটা এখনো নয় পরিষ্কার। সেটা গুছিয়ে নিন। তার পরে ভাবুন আপনার এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে কীভাবে এক্সপেরিমেন্ট বা থিওরির কাজ করতে হবে, আপনার কাজ যে সঠিক, সেটা কীভাবে যাচাই/প্রমাণ করবেন, এবং সব শেষে আপনার কাজের সাথে অন্যদের কাজের কী পার্থক্য হবে, কোন দিক দিয়ে আপনার কাজটা হবে নতুন কাজ। গবেষণার কাজ শুরু করতে গিয়ে ভূমিকায় সময় নষ্ট না করে নেমে পড়ুন। এই ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসেই করা সম্ভব বিশ্বমানের সব কাজ। এগিয়ে চলুন, দেখুন স্বপ্ন, আর করুন নতুন অসাধারণ সব গবেষণা।
Written By: Ragib Hasan
Assistant Professor at University of Alabama at Birmingham

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *