আসলে আমাদের যে পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা হয়, সেই পদ্ধতিটিতে আমরা হয়ে যাই একরকম জোম্বি. আমাদের ভার্সিটি পর্যায়ে শিক্ষা পদ্ধতি আজও সেই তোতা পাখির লেভেলে আছে.
স্বাধীনভাবে চিন্তা করার বিষয়টি কোনোদিনই আমাদের শিখানো হয় না. তাই আমাদের গবেষণার টপিক নিয়ে এত বেশি চিন্তা করা লাগে.
যাই হোক, বাইরে মাস্টার্স-পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের ক্ষেত্রে রিসার্চ টপিক ঠিক করার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ.
রিসার্চ টপিক ঠিক করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন-
১. কি করতে চাই? (What I want to do)
২. কি নিয়ে করতে চাই ? (What is my area)
৩. কি সুবিধা/অবদান পাওয়া/রাখা যাবে? (What will be my contribution)
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর পাবার পর আপনাকে রিসার্চ টপিক নির্বাচনে নামতে হবে.
রিসার্চ টপিক (research topic) নির্বাচনের জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে –
১. পড়ুন, জানুন এবং চিন্তা করুন এই তিনটি বিষয় রিসার্চ টপিক নির্বাচনের জন্য অনেক গুরুত্তপূর্ণ. প্রথমেই তাই আপনাকে অনেক পড়তে হবে. আর এই পড়াশোনার বিষয়টি ঠিক করতে হবে আপনার ইন্টারেস্ট আছে এমন টপিক দিয়ে.
আপনার কাজ হবে আপনার পছন্দের দুই-তিনটি বিষয়ের একটি লিস্ট করা. যেমন আপনি ফিনান্স এ পিএইচডি কিংবা মাস্টার্স করতে চান. এখন চিন্তা করে দেখলেন যে আপনার পছন্দের মধ্যে প্রথমেই আছে কর্পোরেট ফিনান্স, তারপর ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স এবং সবশেষে ইসলামিক ফিনান্স.
লিস্ট করার পর আপনার কাজ হচ্ছে গুগল করা এই টপিকগুলো নিয়ে. এই ক্ষেত্রে সার্চ করার কীওয়ার্ড হতে পারে – থিসিস টপিকস ইন কর্পোরেট ফিনান্স/ইসলামিক ফিনান্স ইত্যাদি.
এই রকম করে আপনি বেশ কিছু থিসিসের হেডিং পাবেন. তারপর আপনার কাজ হচ্ছে গুগল কিংবা essays.se নামক সাইট থেকে ওই হেডিং লিখে সার্চ করা এবং রিলেটেড থেসিসগুলো ডাউনলোড করে পড়া.
২. থিসিস পড়ার পর আপনার কাজ হচ্ছে একটি টপিক ঠিক করে তার উপর কিছু লিটারেচার কিংবা আগে করা রিসার্চগুলো পড়া.
এই ক্ষেত্রে আপনাকে একটি কাজ করতে হবে.
কাজটি হলো আপনি যেসব রিসার্চ পেপার পড়বেন তাদের জন্য একটি লিটারেচার রিভিউ ম্যাট্রিক্স (literature review matrix) তৈরী করা যাতে আপনি রিসার্চ পেপারের নাম, পাবলিকেশন ইয়ার, ফাইন্ডিংস, স্যাম্পল সাইজও ইত্যাদি লিখে রাখবেন. পরবর্তীতে এই ম্যাট্রিক্স আপনাকে লিটারেচার রিভিউ লিখতে সাহায্য করবে.
৩. রিসার্চ টপিক নির্বাচনে আপনার সফলতা নির্ভর করে আপনি আপনার রিসার্চ এবং অতীতে করা রিসার্চের মধ্যে কি রকম পাথর্ক্য করতে পেরেছেন. কারণ আপনার রিসার্চটি অবশ্যই জ্ঞানের জগতে অবদান (contribution to knowledge) রাখতে হবে.
রিসার্চ টপিক নির্বাচনের জন্য আপনার ইন্টারেস্ট খুঁজে বের করা অনেক জরুরি. আর এই বিষয়টি আপনাকেই করতে হবে. বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে রিসার্চ টপিক মোটামুটি সহজেই পাওয়া গেলেও সোশ্যাল সাইন্স, বিসনেস, ইকোনমিক্স এই বিষয়গুলোর রিসার্চ টপিক খুঁজে বের করা একটু কষ্টকর. তাই এই জন্য পড়তে হবে বেশি করে. যে কোনো রিসার্চ টপিক ঠিক করার আগে কমপক্ষে ৫-১০ টি থিসিস এবং বেশকিছু আর্টিকেল পরে নেয়া জরুরি. এতে করে রিসার্চ টপিক সম্পর্কে আপনাকে আইডিয়া যেমন বাড়বে তেমনি করে আপনার অনেক রকম রিসার্চ মেথড নিয়েও জ্ঞান বাড়বে.
রিসার্চ আসলেই মজার একটি বিষয়. নতুন নতুন জিনিস শেখা এবং নতুন কিছু করার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে রিসার্চ. আমাদের তাই প্রচুর পড়তে হবে এবং রিসার্চ করতে হবে.
\our efforts never betray us\
নূর-আল-আহাদ
বিবিএ (ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা) ১৪ তম ব্যাচ
এমবিএ (ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া)
ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)