গবেষণার প্রেষণা ০১ : Research Proposal লিখন

বিদেশে পড়াশোনা নিয়ে মোটামুটি ভালোই আলোচনা করা হয়েছে বিগত পোস্টগুলোতে. আগামীতেও এই চেষ্টা থাকবে. বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য অনেক রকম ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার প্রয়োজন পরে. মোটিভেশন লেটার ছাড়াও এই রকম আরো একটি ডকুমেন্ট হচ্ছে রিসার্চ প্রপোজাল (research proposal).
বাইরে ব্যাচেলর পর্যায়ে আবেদনের ক্ষেত্রে এই ধরণের ডকুমেন্ট প্রয়োজন না পড়লেও মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ডকুমেন্টের প্রয়োজন পরে. যদিও এই ডকুমেন্টটি প্রস্তুত করার তেমন কঠিন কিছু নয়, কিন্তু তারপরও দেখা যায় যে আমাদের অনেকেই এই ডকুমেন্টটি তৈরী করা নিয়ে ব্যাপক বিপাকে পড়েন.
রিসার্চ প্রপোজাল (research proposal) মূলত হচ্ছে আপনি কি টপিক কিংবা বিষয় নিয়ে রিসার্চ/গবেষণা করতে চান তার উপর একটি বিশদ বর্ণনা. কিন্তু এই জিনিসটি লিখার কিছুর নিয়ম রয়েছে. আবার অনেক ভার্সিটিতে আবেদনের জন্য ওরা একটি ফরমেট ঠিক করে দিয়ে থাকে. অনেক জায়গায় আবার শব্দের সংখ্যা উল্লেখ করা থাকে. ফরমেট যাই থাকুক না কেন রিসার্চ প্রপোজাল লিখার সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে-
১. রিসার্চ প্রপোজালের মূল অংশগুলো হচ্ছে – ইন্ট্রোডাকশন (introduction), লিটারেচার রিভিউ(literature review), রিসার্চ মেথড (research method), এবং সবশেষ একটি উপসংহার (conclusion).
২. ইন্ট্রোডাকশন পার্টে (introduction part) আপনাকে আপনার গবেষণার বিষয় নিয়ে একটি ভালো আলোচনা করা লাগবে. এই আলোচনাটি হবে ওভারঅল একটি আলোচনা.
৩. লিটারেচার রিভিউ (literature review)পার্টটি নিয়ে অনেক রকম কথা প্রচলিত আছে. লিটারেচার রিভিউ পার্টটিকে দুভাগে ভাগ করে আলোচনা করতে হবে. প্রথম ভাগে আপনাকে আপনার গবেষণার সাথে সম্পর্কৃত অদ্যাবদি যে সব গবেষণা রয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হবে. অনেকেই জিজ্ঞেস করেন যে গবেষণাগুলো কোন বছরের হলে ভালো হয়. এই ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য নিয়ম হলো, মোটামুটি বিগত ৫-৬ বছরের গবেষণাগুলোকেই এই সময়ের মধ্যে ধরা হয়.
গবেষণাগুলোর বর্ণনার পর আপনাকে গবেষণাগুলোর নানা রকম সীমাবদ্ধতা (limitation) তুলে ধরতে হবে. অনেক রকমের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে যেমন স্যাম্পলগত সীমাবদ্ধতা, ইন্ডাস্ট্রিগত ইত্যাদি. বিগত গবেষণা কর্মগুলোর সীমাবদ্ধতাই হলো আপনার জন্য সুযোগ কিংবা আপনার জন্য লিটারেচার গ্যাপ (literature gap). এই জিনিসকে অনেকে আবার আপনার কান্ট্রিবিউশন টু নলেজও (contribution to knowledge) বলে থাকেন.
রিসার্চ মেথড (research method) হচ্ছে লিটারেচার রিভিউ লিখার পরের ধাপ. এই ধাপে মূলত আপনাকে আপনি কিভাবে আপনার গবেষণাটি করবেন তার একটি বর্ণনা দিতে হবে. আপনি এই ক্ষেত্রে মূলত আপনার স্যাম্পল সাইজও, স্যাম্পলিং ইয়ার, ডাটা সোর্স, ডাটা কালেকশন মেথড, মডেল, ভ্যারিয়েবলগুলোর বর্ণনা ইত্যাদি দিবেন.
এই পার্টে আপনাকে আপনার গবেষণার অবজেক্টিভ/প্রশ্ন, হাইপোথিসিস সম্পর্কেও লিখতে হবে.
তবে আপনি চাইলে এগুলো লিটারেচার রিভিউ পার্টেও দিতে পারেন. এই ক্ষেত্রে ধরা-বাধা তেমন কোনো নিয়ম নেই আসলে.
৪. রিসার্চ প্রপোজালের সর্বশেষ পার্ট হচ্ছে উপসংহার (conclusion). এখানে মূলত আপনি আবারো আপনার গবেষণার একটি সামারি (concise summary) দিবেন বিগত তিনটি পয়েন্টের আলোকে.
রিসার্চ প্রপোজালের ভাষা হবে সিম্পল কিন্তু লজিকাল. অন্য লিখাগুলোর মতো রিসার্চ প্রপোজালটিও আপনাকে ৩-৪ বার রিড-এডিট করতে হবে. যদি কারো কাছ থেকে দেখিয়ে নিতে পারেন তাহলে আরো ভালো. আর না পারলে ইন্টারনেট থেকে ginger নামক একটি ফ্রি সাইট আছে যেখানে প্যারাফ্রেসিংর সুবিধা পাবেন কিন্তু লিমিটেড ভার্শনে. তারপরও কাজে দিবে.
আপনার গবেষণার বিষয় নিয়ে বিগত দিনগুলোর গবেষণা সম্পর্কে জানতে হলে গুগল স্কলার (google scholar) ব্যবহার করতে পারেন. গুগল স্কলার কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানতে হলে ইউটুব থেকে টিউটোরিয়াল দেখে নিতে পারেন.
সবশেষে এইটাই বলবো যে রিসার্চ প্রপোজাল নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, গাইডলাইনসগুলি ঠিক করে অনুসরণ করুন সফলতা আপনার দরজায় আসে নাড়া দিবে. সবার সফলতা কামনা করছি.
\our efforts never betray us\
নূর-আল-আহাদ
বিবিএ (ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা) ১৪ তম ব্যাচ
এমবিএ (ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া)
ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *